স্বদেশ ডেস্ক:
মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পলিপাড়া গ্রামে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ৯টি বাড়ি এখন বর্ষার পানিতে ভাসছে। চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেখানে আশ্রয় পাওয়া ৯টি পরিবার। অসহায় মানুষের দুর্ভোগের সংবাদ পেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদ। সেখানে তিনি দুর্গত পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেন। একইসঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনে উদ্যোগ নেন।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১৫ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয়ে গত বছর বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের পলিপাড়া গ্রামে ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র ৯টি পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয় দুই কক্ষ বিশিষ্ট ৯টি বাড়ি। এসব বাড়ি নিচু জায়গায় নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলে স্থানীয়রা আপত্তি তোলেন। এ ছাড়া ওই প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারেরও অভিযোগ তোলা হয়। কিন্তু স্থানীয়দের মতামত উপেক্ষা করে নিচু জায়গাতেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে উপজেলা প্রশাসন। তাই এখন সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে ভাসছে গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি।
শাজাহানপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার জানিয়েছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’র আওতায় প্রথম পর্যায়ে আড়িয়া ইউনিয়নে সরকারি খাস জমিতে উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধাণে বাড়িগুলো নির্মাণ করা করা হয়েছে। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হজুর আলী জানিয়েছেন, অল্প বৃষ্টিতেই পানি ঘরে ঢুকে গেছে। রান্নাঘর, বাথরুম, টিউবওয়েল, যাতায়াতের রাস্তা সব কিছুই পানিতে ভাসছে। সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য জেলা প্রশাসক, উপজেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হুজুর আলী।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা আয়শা বলেন, ‘হামাকেরে ঘরবাড়ি নাই, তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হামাকেরে ঘর দিছে। ৩ দিন ধইর্যা ঘরের মদ্যে পানি। সাপ, ব্যাঙ, পোকামাকড়ের ভয়ে দিন যাচ্চে।’
অসহায় মানুষের দুর্ভোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ আহমেদ বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের বিষয়টি জানার পর পরই গত বৃহস্পতিবার আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগীদের খোঁজ-খবর নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে আপাতত পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। পরবর্তী সময়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোয় জলাবদ্ধতা নিরসনে আশস্ত করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জিয়াউল হক। আজ শুক্রবার বেলা ১০টায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের এলাকা পরিদর্শনে এসে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
জিয়াউল হক বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে আশ্রয়ন প্রকল্পের পাশের ডাংগুরি খালের বাঁধ কেটে পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এখানকার সমস্যার স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়। এ জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ ও জায়গাটা উঁচু করতে একটি প্রকল্প রেডি করা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ, সহকারী কমিশনার ভূমি আশিক খান, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার প্রমুখ।